আজ

  • সোমবার
  • ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে মন্দির-দোকানে হামলার ঘটনায় ২ মামলা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • ফেনীতে দুটি মন্দির ও বেশ কয়েকটি দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মডেল থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ফেনী মডেল থানার দুজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। একটি মামলায় ২০০ থেকে ২৫০ জন এবং অপর একটি মামলায় ১০০ থেকে ১৫০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তবে আজ রোববার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এদিকে গতকাল শনিবারের ঘটনার পর আতঙ্কে আছে এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

    ফেনী শহরের মন্দিরগুলোতে পুলিশের পাহারা রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল। আজ দুপুর ১২টায় শহরতলির ফেনী-সোনাগাজী সড়কের কালীপাল গাজীগঞ্জ মহা প্রভুর আশ্রম ও দুর্গামন্দিরে ঢোকার ফটকেই চোখে পড়ে ধ্বংস চিহ্ন। মন্দিরে ঢোকার পথের একপাশে সদ্য আগুনে পোড়া একটি গাড়ির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। গাড়ির পাশে গাছের কিছু ডালপালা পুড়ে গেছে। মূল মন্দিরের ফটক ভাঙার যে চেষ্টা করা হয়েছে, তা স্পষ্ট চিহ্ন বহন করছে। মন্দিরের বাইরের সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। দুটি জানালা আংশিক ভাঙা হয়। প্লাস্টিকের কিছু চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল রাত থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে পুলিশি পাহারা চলছে।

    এই মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মানিক লাল দাস তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল রাত আটটার পর একদল দুষ্কৃতকারী আশ্রমে হামলা ও ভাঙচুর করে। দুর্বৃত্তরা মন্দিরের দরজা-জানালা ও আসবাব ভাঙচুর করে এবং মন্দিরের সামনে রাখা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজনকে এগিয়ে আসতে দেখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

    আজ বেলা একটায় ফেনী শহরের ট্রাংক রোড ও তাকিয়া রোডের মোড়ে শ্রী শ্রী কালীমন্দিরের সামনে পুলিশের পাহারা দেখা যায়। ফেনীর বড় বাজারের কালীমন্দির, জগন্নাথবাড়ী মন্দির, বাঁশপাড়া মন্দিরসহ সব মন্দিরের সামনেই পুলিশের পাহারা দেখা গেছে।

    শহরের তাকিয়া রোডে ঢুকতেই একসঙ্গে ছয়টি দোকানের শাটার ভাঙা দেখা গেল। চন্দন রাইসের মালিক চন্দ্র নাথ সাহা অভিযোগ করেন, তাঁর দোকানের শাটার ভেঙে বেশ কিছু মালামাল বাইরে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তাঁর দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা প্রায় দুই লাখ টাকা লুট করে নিয়ে ক্যাশ বাক্সটি বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। দোকানের সামনেই পোড়া ছাই পড়ে রয়েছে। তার পাশেই স্বদেশ পাল, রেনু চন্দ্র পাল, বিমল পাল, সঞ্জয় দাসের দোকানের শাটারও ভাঙা। এসব দোকানের কিছু মালপত্র তছনছ করা।

    একই সড়কে পলাশ ট্রেডার্স, শিবাস চন্দ্র দাস, টিপু দাস, বনরাজ দাস, সৌরভ দাস, দিপন দাস, দুলাল দাস, সাধন দাস, সতীশ দাস, কৃষ্ণ লাল সাহার দোকানসহ ১০টি শুঁটকির দোকানের শাটার ভাঙচুর করা হয়। শহেরর গোপালপট্টির সূর্য পালের খাদ্যশস্যের আড়তে ঢুকে দুর্বৃত্তরা ক্যাশ বাক্স ভেঙে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

    ওই আড়তের মালিক সূর্য পালের ছেলে বিশংকর পাল অভিযোগ করেন, টাকা ছাড়াও দুর্বৃত্তরা তাঁদের আড়ত থেকে একটি ওজন পরিমাপের যন্ত্র ও একটি বস্তা সেলাইয়ের যন্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে।

    কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে মন্দির-বসতবাড়িতে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে ফেনীতে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে।

    আজ সকালে র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ এস এম ইউছুফ, ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান, পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী, ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মিয়াজী, শহরের ব্যবসায়ী নেতারা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা ফেনীর বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন। কর্মকর্তারা এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

    ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন বলেন, গতকালের ঘটনায় করা দুই মামলায় প্রায় ৪০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।

    ফেনী ট্রিবিউন/এএএম/এপি


    error: Content is protected !! please contact me 01718066090